নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩৫ জন বিদেশ ফেরতসহ ১৬২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩ জন। এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে সর্বমোট ১৮৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি পেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন ২৬ জন।
সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সময় নিউজকে জানান, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে কোয়ারেন্টাইনে আছেন সর্বমোট ১৬২ জন। এদের মধ্যে রূপগঞ্জে একই পরিবারের তিনজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ, তার স্ত্রী এবং তাদের শিশু সন্তান রয়েছে।
সিভিল সার্জন আরো জানান, হোম কেয়ারেন্টাইনে থাকা বিদেশ ফেরত ১৬২ জনের মধ্যে সদর উপজেলায়, ৪২জন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৯জন, বন্দর উপজেলায় ২২জন, সোনারগাঁ উপজেলায় ৪১ জন, রূপগঞ্জ উপজেলায় ২৬জন এবং আড়াইহাজার উপজেলায় ১২জন রয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে যারা আছেন তারা সবাই বিদেশ ফেরত। গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জেলায় বিদেশ ফেরতের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৯জন। তবে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া যায়নি। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা যারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, জেলা সিভিল সার্জন বা জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করতে তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মানুষ সচেতন না হলে আমাদের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকেও এ ব্যাপারে স্বার্বিক খোঁজ খবর নেয়াসহ সহযোগিতা করতে হবে পাশাপাশি থানা পুলিশকেও বিষয়টি মনিটরিং করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
পাশাপাশি জেলা সদরের দুইটি সরকারি হাসাপাতালসহ উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বেরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যাপারে জানতে চাইলে নিসভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ সময় নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে ইকুইপমেন্ট মজুদ আছে। সরকারিভাবে প্রতিদিনই কিছি কিছু আসছে। পিপিই কতোটা মজুদ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেকটা পিপিইর মূল্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা। তার উপর ওয়ানটাইম ব্যবহার করা যাবে। একটা পিপিই একজনই ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ব্যয়বহুল হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। যদিও পিপিই ব্যবহারের পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জে এখনো সৃষ্টি হয়নি তারপরেও আমরা মজুদ করে রেখেছি। এছাড়া প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার বাধতামূলক করা হয়েছে। তারা সবাই নিরাপদে আছেন।
তবে বিদেশ ফেরতদের ব্যাপারে জেলা ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার করোনা বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার বিকেলে সময় নিউজকে জানান, বিদেশ থেকে ফিরে আসা এই পাঁচ হাজার প্রবাসী ব্যক্তিদের ঠিকানা শনাক্তকরণে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে। বহু বছর আগে পাসপোর্ট করা এসব ব্যক্তিরা পরবর্তীতে বাসা বাড়ি পরিবর্তন করেছেন। পাসপোর্ট করতে তারা জেলার ঠিকানা ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে অনেকেই জেলার বাইরে স্থায়ী হয়েছেন। কেউ কেউ দেশে ফিরে আসার পর জেলার বাইরে কোন নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন এসন সংবাদও পাওয়া গেছে। যার কারণে ফিরে আসা ব্যক্তিদের ঠিকানামতো গিয়ে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমস্যার কারণে মাত্র ৫৬৪ জনের ঠিকানা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।
এই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী জেলা পুলিশের সেই তালিকামতে, বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের মধ্যে তাদের বর্তমান অবস্থান সদর থানা এলাকায় ৫৯জন, ফতুল্লা থানা এলাকায় ৪২জন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় ১০জন, বন্দর থানা এলাকায় ৪৭জন, রূপগঞ্জ থানা এলাকায় ২১জন, সোনারগাঁ থানা এলাকায় ৮৫জন এবং আড়াইহাজার থানা এলাকায় অবস্থান করছেন ২৮৯জন। তবে ফিরে আসা ব্যক্তিদের যারা স্থানীয় প্রশাসনকে তার নিজ নিজ অবস্থান গোপর করে আছেন তাদের খুঁজে বের করতে প্রতি থানার ওসিকে কঠোর নির্দেশনা দেয়ার কথা তিনি জানান।